ঢাকা: জনস্বার্থ ও সুন্দরবন বিরোধী সব সরকারি অপপ্রচার বন্ধ করে বিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবনকে বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতি মন্ত্রীর গত রোববারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ সোমবার এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, জনস্বার্থ ও সুন্দরবনের স্বার্থে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অবিলম্বে বাতিলের পক্ষে সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য ৫৩টি সামাজিক আন্দোলনের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানান সুলতানা কামাল।
সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নাগরিকদের সম্পর্কে গত রোববার গণমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন যে, প্রতিবাদী নাগরিকবৃন্দ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ে সঠিক তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি ছাড়াই তাদের বিরোধিতা ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যটি একেবারেই সত্য নয় এবং তা আন্দোলনকারী নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত অপপ্রচারের শামিল। আমি তার ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই অসত্য বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি ও তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদসহ নানা মহল তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি দিয়ে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দু’ভাবেই সুন্দরবনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করবে তা তুলে ধরেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গত ১৯ জুন বিদ্যুৎ ভবনের আলোচনা সভায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য ও যুক্তিসমূহ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন যার কোনোটিই সরকার খ-ন করতে পারেনি। এই সভার শেষ পর্যায়ে মন্ত্রী নিজেকে ‘কোনো পক্ষের নয়, দুই পক্ষের মাঝখানের’ বলে অভিহিত করেন ও আরো আলোচনার আশ্বাস দেন। অথচ এর কয়েকদিনের মধ্যেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও নির্মাণকারী কোম্পানির মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অর্থাৎ মন্ত্রীর ‘মাঝখানের’ অবস্থান ত্যাগ করেছেন এবং নাগরিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন।
এছাড়া, একাধিক দেশীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রমাণ করেছেন যে, সরকারঘোষিত সুন্দরবনের পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ‘বাফার জোন’ থেকে মাত্র চার কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র নির্মিত হলে তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও রাসায়নিক বর্জ্য নিশ্চিতভাবেই সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র ধ্বংস করবে। বনের উপর নির্ভরশীল ২-৩ কোটি মানুষের জীবিকা নষ্ট হবে। সারা দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান সাইক্লোনজনিত ধ্বংসলীলার চারণভুমিতে পরিণত হবে।
সুলতানা কামাল তার বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার নিয়ম ভেঙে পরিবেশগত সমীক্ষার অনেক আগেই জমি অধিগ্রহণ করেছে। প্রকল্প বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত নেয়নি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেকগুলো প্রকৃতি-সংরক্ষণশীল আইন, নীতি-নিয়ম ও কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। বিজ্ঞপ্তি।
পাঠকের মতামত